হিদাসপিসের যুদ্ধ

৩২৬ খ্রিঃ পূর্বাব্দে গ্রীসের ম্যাসিডনের রাজা আলেকজান্ডার এবং ঝিলাম ও চন্দ্রভাগা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজা পুরুর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। ঝিলাম নদীর তিরে সংঘটিত এই যুদ্ধের নাম হিদাসপিসের যুদ্ধ বা ঝিলামের যুদ্ধ। তক্ষশিলার রাজা অম্ভি পুরুর প্রতিদ্ধন্ধি হওয়ায় এই যুদ্ধে তিনি সম্রাট আলেকজান্ডারকে সমর্থন করেছিলেন।

কলিঙ্গ যুদ্ধ

খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করলে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

এই সময় কলিঙ্গের রাজা ছিলেন আনন্দ পদ্মানাভান।

যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে সম্রাট অশোক যুদ্ধ নীতি রদ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘ধর্ম বিজয়’ অর্থাৎ ধর্মের দ্বারা জয় নীতি প্রতিষ্ঠা করেন।

তরাইনের প্রথম যুদ্ধ

  • বর্তমান হরিয়ানার থানেশ্বরের কাছে তরাইন নামক শহরটি অবস্থিত।
  • ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির নেতৃত্বাধীন ঘুরি বাহিনী ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের নেতৃত্বে চৌহান রাজপুত বাহিনীর মধ্যে ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দে এই যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়।
  • এই যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘুরি পরাজিত হন এবং গজনিতে ফিরে আসেন।

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ

  • মুহাম্মদ ঘুরির ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে এই যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়।
  • এই যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত ও বন্দী এবং পরবর্তী সময়ে নিহত হন।
  • এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ভারতে মুসলিম শাসনের সুত্রপাত হয়।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ:-

  • ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের বর্তমানে একটি জেলা শহর হল পানিপথ।
  • মুঘল সম্রাট বাবর ও দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদীর মধ্যে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
  • দৌলত খান লোদি বাবরকে ভারত আক্রমণ করে ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
  • বাবরের বাহিনীতে ১৫,০০০ সৈনিক এবং ২০ থেকে ২৪টি ফিল্ড আর্টি‌লারি ছিল। ইবরাহিম লোদির বাহিনীতে সর্বমোট লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১,০০,০০০। তবে মূল লড়াইয়ের বাহিনীতে লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০। এর পাশাপাশি যুদ্ধ হাতি ছিল প্রায় ১,০০০।
  • এই যুদ্ধে ভারতে প্রথম কামানের ব্যবহার হয়।
  • এই যুদ্ধে বাবর রুমি কৌশল প্রয়োগ করা হয়।
  • বাবর এই যুদ্ধে তুলুগুমা ও আরাবা নামক নতুন কৌশল ব্যবহার করেন।
  • এই যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে বাবর ভারতে লোদি বংশের অবসান ঘটিয়ে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ:-

  • ১৫৩৯ খ্রিষ্টাব্দে চৌসার যুদ্ধে এবং ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে বিল্গ্রামের যুদ্ধে শেরশাহ মোঘল সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে দিল্লিতে শূর বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয় এবং তার উত্তরসূরী হয় ছোট ছেলে ইসলাম শাহ সূরি, যিনি ছিলেন একজন দক্ষ শাসক।
  • ১৫৫৩ সালে তার মৃত্যুর পর সূর সাম্রাজ্য উত্তরাধিকার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
  • হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে হুমায়ূন এই বিবাদ কাজে লাগিয়েছিলেন এবং ১৫৫৫ সালের ২৩শে জুলাই মুঘলরা সিকান্দার শাহ সুরি কে পরাজিত করে, এবং সবশেষে দিল্লী ও আগ্রার উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
  • ইসলাম শাহ সূরির আইনসঙ্গত উত্তরাধিকারি, তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে তার মামা হত্যা করে এবং আদিল শাহ সুরি হিসাবে সিংহাসনে বসেছিলেন।
  • হেমু ছিলেন আদিল শাহর প্রধানমন্ত্রী এবং সূরি সেনাবাহিনীর জেনারেল।
  • ১৫৫৬ সালের ২৬ জানুয়ারি যখন হুমায়ূন মারা যান এবং তার উত্তরাধিকার আকবরের বয়স তখন মাত ১৪ বছর।
  • এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য হেমু বাংলা থেকে দ্রুত যাত্রা করেছিলেন এবং মুঘলদের বায়ানা ,ইতাহা,সাম্ভাল,কালপি এবং নারাউল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তুঘলাকাবাদের যুদ্ধে মুঘল প্রশাসক তারদি বেগ খানের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন।
  • ১৫৫৬ সালের ৭ অক্টোবরের যুদ্ধের পর তিনি দিল্লী দখল করেছিলেন এবং বিক্রমাদিত্য (বিক্রমজিৎ) উপাধি ধারণ করে রাজকীয় মর্যাদা দাবী করেছিলেন।
  • সংবাদ পেয়ে, হুমায়ূনের উত্তরসূরি ১৩ বছরের আকবর ও তার অভিভাবক বৈয়ারাম খাঁ দ্রুত দিল্লী পুনরুদ্ধারের জন্য যাত্রা করেন এবং পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
  • ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর মুঘল সম্রাট আকবরের ও সম্রাট হেম চন্দ্র বিক্রমাদিত্যর (হেমু) মধ্যে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
  • এই যুদ্ধে আকবরের অভিভাবক ছিলেন বৈয়ারাম খাঁ।
  • আকবর তথা মোঘলরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করে।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ:-

  • সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। দেশীয় ও বিদেশী মুসলিম সভাসদরা জড়িয়ে পড়ে অন্তর্দন্ধে, উত্থান হয় আঞ্চলিক শক্তির যার মধ্যে অন্যতম মারাঠা শক্তি।
  • মারাঠারা দিল্লির আধিপত্য কায়েম করার জন্য দেশীয় মুসলিম সভাসদদের সাথে হাত মেলালে বিদেশী মুসলিম সভাসদরা হাত মেলায় আফগান অধিপতি আহমদ শাহি আবদালির সাথে।
  • মারাঠা শক্তির সাথে যোগ দেয় সিন্ধিয়া, বুন্দেল, হোলকার, জাঠ, ইব্রাহিম খান গার্দির গোলন্দাজ বাহিনি এবং গাইখন্দের যোদ্ধা।
  • রোহিলার নজিব-উদ-দৌলা এবং অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা আফগানদের সাথে যোগ দেন।
  • দুই শক্তি ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জানুয়ারি পানিপথের প্রান্তরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় যা ইতিহাসে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত।
  • এই যুদ্ধে মারাঠা শক্তি পরাজিত হয়।
  • এই বিজয়ের ফলে দুররানি সম্রাজ্য পরবর্তী সময়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।